জীবনের বাস্তবতা নিয়ে সেরা অনুপ্রেরনা মূলক গল্প
লেখাটি একটু মন দিয়ে পড়ো, আশা করি উপকৃত হবেঃ
১৮ থেকে ২৪ বছর, জীবনের চরম বাস্তবতা মুখোমুখি হবে তুমি । তোমার বয়স যখন ১৮ থেকে ২৪ এর মধ্যে থাকবে, তখন তুমি অনেক প্রিয় বন্ধুদেরকে হারিয়ে ফেলবে।
তুমি অনেক ভুল চিন্তা করবে, ভূল সিদ্ধান্ত নিবে। তুমি অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে ব্যর্থ হবে। তুমি নতুন করে অনেক কিছু উপলব্ধি করতে পারবে। তখন তুমি কিছুটা বাস্তবতা বুঝতে শুরু করবে।
মাঝে মধ্যে নিজেই নিজেকে চিনতে অনেক কষ্ট হবে । তুমি অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সময় পার করবে, হতাশা, একাকিত্ব, বিষন্নতা, প্রিয়জনদের দেয়া কষ্ট তোমাকে ছাড়তেই চাইবে না।
যাদেরকে তুমি এই দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী ভালবাসতে তারাই এক সময় তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে, যাদেরকে তুমি উপরে উঠার সিড়ি দেখিয়েছিলে তারাই তোমাকে উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে দিবে । তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, মুনাফেকি আচরন করবে। তারপর, তোমার খুব কষ্ট হবে, খারাপ লাগবে তুমি অনেক বেশী আপসেট হয়ে যাবে । এমন কিছু করার কথা তোমার মাথায় আসবে, যা তুমি কখনোই চিন্তা করোনি। এমনকি সুইসাইড করার মত ফালতু আর নিকৃষ্ট চিন্তা তোমার মাথায় আসতে পারে। তোমার কাছে মনে হতে পারে এই জীবন রেখে কি লাভ?
বয় ফ্রেন্ড অথবা র্গাল ফ্রেন্ড তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। দিনের পর দিন তুমি ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে কাটাবে। তখন পৃথিবীর কোন মোটিভেশন তোমাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। তুমি না চাইলেও তোমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে কাটানো সময় তোমার প্রতিটা মুহূর্ত মনে পরবে। আর তুমি কষ্ট পেতে থাকবে দিনের পর দিন।
কিন্তু, বেশি দিন না… ছয় মাস বা একবছর, দুই বছর পর তুমি আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আবার তুমি স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, যে মানুষগুলো তোমাকে এত যন্ত্রনা দিল, ওই মানুষগুলো আবার তোমার সাথে নাটক শুরু করবে। তখন তুমি ওদেরকে রিজেক্ট করবে এবং পিছনে ফিরে হাঁসবে ওদেরকে দেখে, কারন এতদিনে তুমি বুঝতে পেরে গেছো।
তোমাকে হতাশ হলে চলবে না। সব কিছুর পর তুমি নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করবে। তারপর তুমি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তুমি তোমার মত করে সফলতা ছিনিয়ে নিয়ে আসবে । মনে রাখবে, সফলতাই হচ্ছে সর্বোত্তম প্রতিশোধ ।
জীবনটা তোমারই, তাই করো দেয়া দুঃখ/কষ্ট পেয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ন সময় নষ্ট করো না । বরং আরো জেদি হয়ে উঠো সফলতার জন্য । জীবন তোমাকে একটু কষ্ট দিবে। কারণ, নাহলে তুমি পৃথিবীর আসল রূপ চিনতে পারবে না।
এটাই জীবন, এটাই বাস্তবতা…..আমাদের সবাইকে এটা মানতেই হবে ।
জীবন পরিবর্তনকারী সেরা ৫ টি অনুপ্রেরনা মূলক গল্প
জীবন পরিবর্তনকারী সেরা ৫ টি অনুপ্রেরনা মূলক গল্প । ধৈর্য্য সহকারে প্রতিটি গল্প মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, অবশ্যই আপনি কাজে অনুপ্রেরনা পাবেন ।
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০১
ঝুকি নিতে পারলেই জীবনে সফলতা আসবে
একদিন মন্দিরের মেঝেতে থাকা একটি সাধারন পাথর মূর্তি বানানো এক পাথরকে বলছে ও ভাই দেখেছো, আমরা দুইজনই পাথর অথচ মানুষ তোমাকে কত আদর, ভালবাসা ও সম্মান করে, তোমাকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখে, তোমাকে ভক্তি করে, তোমার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে পার্থনা করে আর আমাকে মানুষ পাড়িয়ে পাড়িয়ে পিষ্ঠ করে ফেলে ।
তখন মূর্তির পাথরটি মেঝেতে থাকা পাথরটিকে উত্তর দিল, আজ হয়ত তুমি আমাকে দেখছো মানুষ আমাকে ফুল দিচ্ছে, পুজো করছে কিন্তু যেদিন আমাকে লোহার যন্ত্র দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে রক্তার্থ করে এই মূর্তিতে পরিনত করেছে সেই কষ্ট বলার মত ভাষা আমার নেই ।
আমি সেদিন সহ্য করে ছিলাম বলেই আজ মানুষ আমাকে ফুল দিচ্ছে, পুজো করছে । আর তুমি সাধারন পাথরের মত দিন কাটাচ্ছ ।
গল্পটি থেকে কি শিখলামঃ
১. কষ্ট হলেও নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে একদিন মানুষ আপনাকে সংর্বদনা দিবে ।
আরও পড়ুনঃ জীবনে বড় হতে চাইলে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০২
লোক দেখানো আবেগ- অনুভূতি দেখে প্রভাবিত হয়ে যেয়ো না ।
একদিন স্বামী আর স্ত্রী বেড়াতে গেল চিড়িয়াখানায়। তারা দেখল একটি বানর তার সঙ্গীনির সাথে খেলছে, খুনসুটি করছে। স্ত্রী দৃশ্যটা দেখে মুগ্ধ হয়ে স্বামীকে বলল: কী চমৎকার ভালোবাসার দৃশ্য তাই না !
এরপর তারা গেল সিংহের খাঁচার কাছে । দেখল: সিংহ খাঁচার একপাশে চুপচাপ বসে আছে। সিংহীটাও অদূরে অন্য দিকে ফিরে বসে আছে। স্ত্রী দেখে বলল: আহরে! ভালোবাসার কী নির্মম পরিণতি !
স্বামী এতক্ষণ চুপচাপ স্ত্রীর পাশে হাঁটছিল। এবার নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন: স্বামী স্ত্রীকে বলল, এই ধরো, এই ছোট পাথরটি সিংহীর দিকে ছুঁড়ে মারো,আর দেখো কী ঘটে! মহিলাটি যখন ছোট পাথরটি সিংহীর দিকে ছুঁড়ে মারল, সিংহটি তখন ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। সঙ্গীনিকে বাঁচানোর জন্য গর্জে উঠলো।
এবার স্বামী স্ত্রীকে বলল, মেয়ে বানরটার দিকে ছুঁড়ে মারো। দেখ কী ঘটে।পুরুষ বানরটার আচরণ লক্ষ্য কর। স্ত্রী ছোট পাথরটি বানরীর দিকে ছুঁড়ে মারল । দেখা গেল ছুঁড়ে মারার আগেই স্ত্রী
বানরটা নিজের আত্মরক্ষার্থে ছুটে পালিয়ে গেল। সঙ্গীনির দিকে একবার ফিরেও তাকাল না।
স্বামী বলল: মানুষ তোমার সামনে যা প্রকাশ করে তা দেখে প্রভাবিত হয়ে যেয়ো না। অনেক মানুষ আছে যারা তাদের বানোয়াট , লোক দেখানো আবেগ- অনুভূতি প্রকাশ করে অন্যকে প্রতারিত করে। আবার অনেক মানুষ আছে যারা তাদের ভেতরে গভীর অনুরাগ-ভালবাসা লুকিয়ে রাখে।
আর বর্তমানে এই সিংহদের চেয়ে বানরদের সংখ্যাই বেশী । আর মানুষ এই বানরদেরকেই পছন্দ করে ।
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০৩
সমস্যাকে ঝেড়ে ফেলে সামনে আগাতে হবে
এক লোকের খুব প্রিয় গাধাটি একদিন একটি গভীর খাড়া পাহাড়ে খাদে পড়ে যায়। লোকটি গাধাটিকে টেনে তোলার আপ্রান চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন গাধাকে জীবন্ত সমাহিত করার।
তিনি গাধার উপর মাটি ঢালতে থাকেন। অপরদিকে ভার কমাতে গাধাটি গায়ে পড়া মাটি ঝেড়ে ফেলে দিতে থাকে। আর তার উপর দাড়াতে থাকে।
আরো মাটি পড়তে থাকে , সে ঝাড়তে থাকে আর উপরে উঠতে থাকে ।
এভাবে লোকটি মাটি ফেলতে থাকে আর গাধাটি মাটি ঝেড়ে ফেলতে ফেলতে উপর উঠতে থাকে । আস্তে আস্তে দুপুর নাগাদ সে অনেকখানি উপরে উঠে আসতে সক্ষম হয় । এক পর্যায়ে গাধাটি উপরে ঊঠে আসে।
সমস্যাকে সঙ্গি নয়, ঝেড়ে ফেলে, তার থেকে শিক্ষা নিয়ে চলতে থাকলে সুদিন আসবেই ।
আরও পড়ুনঃ ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের সাধারন কিছু ভূল
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০৪
আপনি অন্যজনকে যা দেবেন, ঠিক সেটাই পরবর্তীতে আবার আপনার কাছে ফিরে আসবে তা সেটা সম্মান হোক অথবা ঘৃণা ।
এক গ্রামে একজন সৎ ও দরিদ্র কৃষক ছিলেন.. তিনি দুধ থেকে দই ও মাখন তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন । একদিন কৃষকের স্ত্রী মাখন তৈরি করে কৃষককে দিলেন বিক্রি করতে । কৃষক মাখনগুলো বিক্রি করার জন্য গ্রাম থেকে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন । মাখন গুলো গোল-গোল রোল আকৃতিতে রাখা ছিল । যার প্রত্যেকটির ওজন ছিল ১ কেজি করে । শহরে পৌঁছে কৃষক প্রতিবারের ন্যায় পূর্ব নির্ধারিত দোকানে মাখন গুলো দিয়ে পরিবর্তে লবন, তেল, চিনি, মসলা ও তার সংসারের প্রয়জনীয় সদাই নিয়ে আসতেন ।
একদিন কৃষক দোকান থেকে চলে যাওয়ার পরে দোকানদার মাখনের বানানো রোল গুলো ফ্রিজে রাখার সময় ভাবলেন ওজন ঠিক আছে কিনা? একবার পরীক্ষা করে দেখা যাক, মাখনের রোল গুলো ওজন করতেই উনি দেখলেন মাখনের ওজন আসলে আছে ১০০০ গ্রাম নয়, প্রতিটা আছে ৯০০ গ্রাম করে । পরের সপ্তাহে যখন আবার কৃষক সেই দোকানে মাখন বিক্রি করতে গেলেন.. দোকানের সামনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে দোকানদার কৃষকের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলতে লাগলেন.. ‘বেরিয়ে যাও আমার দোকান থেকে.. এবার থেকে কোন বেঈমান চিটিংবাজের সাথে ব্যাবসা করব না । আমার দোকানে আর কোনদিন পা রাখবে না.. ৯০০ গ্রাম মাখন ১ কেজি বলে বিক্রি করা লোকটার মুখ আমি দেখতে চাইনা ।
কৃষক বিনম্র ভাবে কম্পিত স্বরে দোকানদারকে বললেন- দাদা! দয়া করে রাগ করবেন না.. আসলে আমি একজন খুবই গরিব মানুষ, দাড়িপাল্লা বা বাটখারা কেনার মতো পয়সা আমার নেই । তাই আপনার থেকে প্রতিবার যে এক কেজি করে চিনি নিয়ে যেতাম সেটাই দাড়িপাল্লার একপাশে রেখে অন্য পাশে মাখনের রোল উঠিয়ে মেপে নিয়ে আসতাম।
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -৫
একটি নতুন গাড়ী ও একটি ফুটফুটে বালক
সদ্য নতুন কেনা গাড়ীটা যখন বাসার নীচে পার্কিংয়ে যখন পরিষ্কার করছিলাম তখন আমার ছয় বছরের আদরের ছেলেটা লোহার একটা কিছু দিয়ে চকচকে গাড়ীটাতে কিছু লিখছিল । খুব শখের গাড়ী তাই আর রাগ সামলাতে না পেরে ছেলের হাতের উপর হাতে থাকা জিনিসটা দিয়ে আঘাত করলাম । রাগের মাথায় খেয়াল করেনি যা দিয়ে আঘাত করেছি সেটা ছিল লোহার একটা পাইপ ।
আমার ছোট্ট ছেলেটা এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে ঘুমাচ্ছিল আর আমি ওর পাশে বসে কাঁদছি । লোহার আঘাতে ছেলেটার চারটা আঙুল ভেঙে গেছে। আর ঠিক হবে না কখনও । আমার চোখের পানি ওর গালের উপর পড়ায় তার ঘুম ভেঙে যায় । ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে তাকিয়ে আমায় বলে ‘সরি বাবা, আমি আর গাড়ীর উপর কখন্লই লিখব না । আমার আঙুলগুলো কি আবার আগের মত হবে বাবা?
বাসায় ফিরে এসে পুরো গাড়ীটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলি । তারপর ক্লান্ত হয়ে যখন বসে পড়ি তখন আমার চোখ পড়ে গাড়ীর গায়ে ছেলের লিখাটার উপর, তাতে লিখা ছিল ”Love u Dad”
পরদিন সকালে সেই হতভাগ্য বাবা ভীষণ কষ্টে আত্মহত্যা করেন। তার নিথর দেহের পাশে একটা চিরকুট পড়ে ছিল, আর তাতে লেখা ছিল : ‘Anger & love have no limits. The choice is yours!’
রাগ পরিহার করুন। অশান্ত না হয়ে একটু ধৈর্য ধরুন তা না হলে ফলাফল হবে ভয়ংকর ।
সেরা ৫ টি মোটিভেশনাল গল্প যা জীবন পাল্টে দিতে পারে
সেরা ৫ টি মোটিভেশনাল গল্প যা জীবন পাল্টে দিতে পারে । ধৈর্য্য সহকারে প্রতিটি গল্প মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, অবশ্যই আপনি কাজে অনুপ্রেরনা পাবেন ।
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০১ঃ
সঠিক সময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখতে হবে
একদিন এক ভদ্রলোক একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে একটি ব্যাঙ রেখে পানি গরম করা শুরু করল । পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ব্যাঙটিও তার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে সহনীয় পর্যায়ে নিতে শুরু করল যদিও সে চাইলেই লাফ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারত কিন্তু সে লাফ না দিয়ে সহ্য করতে থাকে ।
আস্তে আস্তে পাত্রের তাপমাত্রা যখন আরও বাড়িয়ে ফুটন্ত গরম করা হয় তখন ব্যাঙটি আর সহ্য করতে না পেরে সে সিদ্ধান্ত নেয় লাফ দেওয়ার কিন্তু ততক্ষনে তার আর লাফ দেওয়ার মত শক্তি নেই । পানি আরও গরম হতে থাকে যার ফলে সে অতিরিক্ত গরম পানিতে থাকতে থাকতে একটা সময় মারা যায় ।
এখন যদি প্রশ্ন করা হয় ব্যাঙটি কিভাবে মারা যাওয়ার কারন কি ??
তাহলে আমরা অধিকাংশরাই বলব যে গরম পানির কারনে মারা গেছে ।
কিন্তু না সে আসলেই গরম পানির কারনে মারা যায়নি, সে মারা গেছে সঠিক সময়ে লাফ দেওয়ার সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারনে ।
ঠিক তেমনি প্রতিটি মানুষের স্থান কাল পাত্র ভেদে একেকটা বিষয়ে সহ্য করার ক্ষমতা থাকে । আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে ক্ষমতা থাকা অবস্থা সঠিক সিদ্ধান্তটি সঠিক সময়ে নিতে হবে । আবেগ ভালবাসা দেখিয়ে দেরিতে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সঠিক সময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ।
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০২
এক গ্লাস পানির ওজন কত হতে পারে দেখে নিন
একজন মনোবিজ্ঞানী স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট পড়ানোর সময় রুমে চারপাশে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় শ্রোতাদের সামনে এক গ্লাস পানি উপর করে তুলে ধরলেন। তখন সবাই ভেবে ছিল হয়তো তিনি গ্লাস অর্ধেক খালি না অর্ধেক ভর্তি এই প্রশ্নটি করবেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তিনি হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন ” এই এক গ্লাস পানি কত ভারী ”। উত্তর আসল ২৫০ এমএল থেকে ৩০০ এমএল ভেতর ।
তখন মনোবিজ্ঞানী বললেন এর অরজিনাল ওজন এখানে কোন ব্যাপার না, ব্যাপারটা হলো আমরা গ্লাসটিকে কতক্ষন ধরে রাখছি, ওজনটাও সেটার উপর নির্ভর করছে।
যদি আমি এটাকে এক মিনিটের জন্য ধরে রাখি, তবে কোন সমস্যা হবে না। যদি এটাকে এক ঘন্টা ধরে রাখি তবে আমার হাতে ব্যাথা অনুভূত হবে। আর যদি একদিনের জন্য এভাবে ধরে থাকি তবে আমি পক্ষঘাতগ্রস্থ বোধ করব। প্রতিটা ক্ষেত্রে এর আসল ওজনে কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্তু ধরে রাখার সময় বাড়ার সাথে সাথে এটি ভারী থেকে ভারী লাগতে শুরু করে।
তিনি আরো বিশদে গিয়ে বলেন আমাদের জীবনের চাপ এবং উদ্বেগগুলো এই গ্লাসের পানির মত। যা নিয়ে কিছুক্ষন ভাবলে তেমন কোন কিছু হবে না। কিন্তু এই চাপ আর উদ্বেগ যদি আমরা সারাদিনের জন্য ধরে রাখি, মনে রাখি ।তবে তা আমাদের কোন কিছু করার সামর্থ্যটা কেড়ে নিতে পারে। তাই চাপ কখনো অধিক সময় পর্যন্ত টানতে যাবেন না। এটাকে খুব অল্প সময়ে ছেড়ে দিতে হবে। অর্থাৎ গ্লাস নামিয়ে রাখতে হবে মনে করে।
গল্পটি থেকে কি শিখলামঃ
১. আপনি কোন একটা বিষয় নিয়ে অধিক সময় নেতি বাচক ভাবলে হতাশ হবেন ।
২. জীবনের চাপ এবং উদ্বেগগুলো বেশি সময় ধরে রাখা ঠিক হবে না ।
আরও পড়ুনঃ জীবন পরিবর্তনকারী সেরা ৫ টি অনুপ্রেরনা মূলক গল্প
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০৩
একটি হাতি এবং তার বিশ্বাস
এক লোক হাতির পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিল, হটাৎ থেমে গেলন। একটি বিষয় মনে দ্বিধা তৈরী করায় তিনি থমকে যান। তিনি দেখলেন এতো বড় প্রাণী গুলো শুধুমাত্র সামনের পায়ে ছোট্ট একটি দড়ি দ্বারা বাঁধা হচ্ছিল। কোন চেইন বা কোন খাঁচা নয়। এই দড়ি এতো বড় প্রাণীর পক্ষে ছেড়া খুব মামুলি ব্যাপার। যেকোন সময় চাইলে এটি ছিড়ে তারা মুক্তভাবে চলে যেতে পারে কিন্তু বিশেষ কোন কারণে তারা তা করে না। কারণটাই তাকে ভাবাচ্ছিল।
কাছেই তিনি একজন প্রশিক্ষককে পেলেন এবং জানতে চাইলেন কেন এই প্রাণী গুলো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকছে, দূরে পালিয়ে যাবার কোন চেষ্টা কেন করছে না। তখন প্রশিক্ষক উত্তরে বললেন-যখন তারা খুব ছোট ছিল, তখনও তাদেরকে এই সাইজের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হতো, যা বেঁধে রাখার জন্য তাদের ঐ সময়ের সাইজের জন্য যথেষ্ট ছিল। বড় হতে হতে তারা ধারনা করতে থাকে এই দড়ি তাদের নিয়ন্ত্রন করছে, এটি থেকে বেরিয়ে যাওয়া যাবে না। এক সময় এটি বিশ্বাসে পরিণত হয়, যেমন এখন, তাদের সাইজ দড়ির চেয়ে বহুগুন বড় হলেও তাদের বিশ্বাস যে, এই দড়ি এখনো তাদের ধারণ করতে পারে। তাই তারা তা ছিড়ে বাইরে যাবার কোন প্রচেষ্টা কোন দিনও করে না।
লোকটি খুব অবাক হয়েছিল। এই প্রাণীগুলো চাইলেই তাদের বন্ধন থেকে বাইরে আসতে পারে কিন্তু শুধুমাত্র “তারা পারবে না ” এই বিশ্বাসের কারণে তারা সেখানেই আটকে থাকে ,যেখানে তাদের আটকে রাখা হয়।
হাতির মত , আমাদের অনেকেই বিশ্বাস করে বসে আছেন যে জীবনে কিছু করতে পারব না। শুধুমাত্র, জীবনে কোন এক সময় ব্যর্থ হয়েছিলেন এই কারণে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে ।
গল্পটি থেকে কি শিখলামঃ
১. বিশ্বাসই আপনাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে ।
২. ব্যর্থতা হল শিখার একটি অংশ, জীবন সংগ্রামে কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত না ।
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০৪
আলু, ডিম আর কফির উদাহরন যা আপনাকে নতুন বিছু শিখাবে
একদিন মেয়ে তার বাবাকে নিজের জীবন নিয়ে হতাশার অভিযোগ করছিল। বলছিল সে আর পারছে না, সে জানে না কিভাবে কি করতে হবে ,লড়তে লড়তে সে আজ ক্লান্ত। এই যেন একটি সমস্যা শেষ হলে আরেকটি হাজির হওয়া।
মেয়েটির বাবা পেশায় একজন রন্ধনশিল্পী। মেয়ের হতাশার কথা শুনে তিনি মেয়েকে রান্না ঘরে ডেকে আনলেন। তারপর তিনটি পাত্রে পানি ভর্তি করে তা আগুনের উপর বসিয়ে দিলেন। যখন পাত্র তিনটিতে বলক আসল, তখন তিনি একটিতে আলু, একটিতে ডিম আর অন্য একটিতে কফি ঢেলে দিলেন। এভাবে আরো কিছুক্ষন সিদ্ধ হতে থাকল, মেয়ের সাথে কোন কথা বললেন না। অপর দিকে মেয়ে অধৈর্য্য হয়ে দেখে যাচ্ছিল বাবা কি করছিল।
বিশ মিনিট পর তিনি চুলা বন্ধ করে একে একে প্রথমে আলু উঠিয়ে নিয়ে একটি বাটিতে রাখলেন, ডিম রাখলেন আর কফি একটি কাপে ঢাললেন। তারপর মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন” তুমি এখন কি দেখছো”
মেয়ে উত্তর দিল ” আলু , ডিম আর কফি”
বাবা বললেন ভালো করে দেখো এবং ধরে দেখো।
মেয়ে বাবার কথা মত ধরে দেখলো আলু নরম হয়ে গেছে, ডিমের খোসা খুলে দেখা গেল সিদ্ধ হয়ে শক্ত হয়ে গেছে। অন্যদিকে কফির কাপ থেকে বের হয়ে আসা ঘ্রাণে তার মুখ হাসোউজ্জল হয়ে যায়।
‘এসবের অর্থ কি ”বাবা” মেয়ে জানতে চাইল ।
বাবা ব্যাখ্যা করলেন-
আলু, ডিম, কফি বিন যদিও একই তাপমাত্রার ফুটন্ত পানিতে অর্থাৎ একই দৈব পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু নিজের মত করে অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়।
শক্ত আলু নরম হয়ে যায় ।
পাতলা আবরণে সুরক্ষিত নরম ডিম শক্ত হয়ে যায় ।
আর কফি বিনগুলো ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। ফুটন্ত পানিতে এরা নিজেদের মেলে ধরে পানিটাকেই পরিবর্তন করে ফেলে। নতুন এক জিনিস সৃষ্টি করে।
” তুমি কোনটা?” মেয়ের কাছে বাবা জানতে চাইলেন। প্রতিকুল পরিবেশ যখন তোমার দুয়ারে কড়া নাড়বে তখন তুমি কিসের মত প্রতিক্রিয়া দেখাবে?।
গল্পটি থেকে কি শিখলামঃ
১. প্রতিকুল পরিবেশে নেজেকে শক্ত করতে হবে ।
২. পরিবেশ বুঝে নিজেকে উপস্থান করতে হবে ।
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০৫
নো রিস্ক নো গেইন । ঝুঁকি নিতে পারলেই জীবনে সাফল্য আসবে ।
একটা গ্রামে পিন্টু আর মিন্টু নামে দুই যুবক বাস করত । তারা দুজনেই বেকার । দিনমজুরের কাজ ছাড়া গ্রামে আর কোনো কাজই তারা দেখছে না । এইদিকে নব বিবাহিতা স্ত্রী নিয়ে দুজনের একই রকম পারিবারিক অবস্থা । ভিন্ন মানসিকতার হলেও দুজনের একটাই সাধারণ সমস্যা , আর সেটা হলো কী করে টাকা রোজগার করা যায় ।
এই সব ভাবতে ভাবতে পিন্টুর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল । সে মিন্টুকে বলল দুজনে মিলে যদি একটা করে গাভী কেনা যায় , তাহলে কেমন হবে । গাভীর দুধ বিক্রি ক’রে কিছু টাকা পাওয়া যাবে । আর গাভীর বাচ্চাও হবে , ফলে গাভীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে । দুধও বেশি বেশি হবে । আর এভাবে দুজনই একদিন অনেক টাকার মালিক হয়ে যাব । গাভীর সংখ্যা যখন বাড়বে , তখন অনেক লোক রাখবে দেখাশুনার জন্য ফলে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হবে —-এভাবে দুজনই একদিন ধনী হয়ে উঠবে ।
এভাবে পিন্টু তার ভাবনার কথা মিন্টুকে জানায় । এই প্রস্তাবটি মিন্টুরও খুব ভালো লাগে । সেও প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায় । তারা দুজনে কথা পাক্কা করে ফেলে । খুব আনন্দ আর উদ্দীপনা নিয়ে দুজনেই বাড়ি যায় । দুজনেই তাদের এই উদ্যোগের কথা তাদের নিজেদের স্ত্রীকে জানায় ।
পিন্টুর স্ত্রী সব শুনে খুব আনন্দের সঙ্গে তার গয়না খুলে স্বামীর হাতে দিয়ে বলল ” খুব ভালো পরিকল্পনা , আমার গয়না বিক্রি করে গাভী কেনো । যখন বেশি বেশি রোজগার হবে , গয়না কিনতে আর কতক্ষন । ” স্ত্রীর কথায় গর্বিত হয় পিন্টু ।
ঐদিকে মিন্টু তার পরিকল্পনার কথা স্ত্রীকে জানালে তার স্ত্রী বলে , ” দেখো একে তো আমাদের কিছুই নেই । খালি কয়েকটা মাত্র গয়না সম্বল । আর তা বিক্রি করে গাভী কিনবে । কিন্তু যদি গাভীটি মরে যায তখন কি হবে ”
মিন্টুর মনেও খটকা লাগে । মনে হয় তার স্ত্রী ঠিকই বলছে । কারণ গাভী যদি মরে যায় , একমাত্র সম্বল গয়নাগাটিও যাবে — গাভী ও যাবে । এত ঝুঁকি নেওয়াটা উচিৎ হবে না ।
পরের দিন দুই বন্ধুর দেখা হলে মিন্টু বলে ” ভাই পিন্টু , গাভী যদি মরে তাহলে…. ? “
পিন্টু তখন বলল , ” এত নেগেটিভ চিন্তা করছিস কেন ? কেনার আগেই গাভীর মরার কথা ভাবছিস ? আর গাভী কোন কারণেই বা মরতে যাবে ? ”
মিন্টু একই সুরে হতাশ জবাব দেয় , ” তা তো বুঝলাম যে গাভী মরবে না । কিন্তু ধর , যদি মরে ? তাহলে কী হবে ? “
পিন্টু অত্যন্ত স্নেহ ভ’রে জবাব দেয় , “তোর ‘তাহলে’র জবাব আমার কাছে নেই । ”
মিন্টু বলে ” এই তাহলে’র জবাব আমার কাছে আছে । আমরা বরবাদ হয়ে যাবো । সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবো । “
অত্যন্ত বেদনাহত হয়ে পিন্টু বলে , ” কিন্তু তুই কেন বার বার ভাবছিস যে গাভীটা মরে যাবে …..একটু অন্যভাবে ভেবে দেখ , গাভীটা দুধ দেবে । আমরা বিক্রি করবো । প্রথমে পয়সাগুলো জমাবো । তারপর আরও গাভী কিনবো । অনেক পয়সা হবে যখন , তখন অনেক গয়না কেনা যাবে , বাড়িও বানানো যাবে । এভাবে দুধের বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠব দুজন । ”
কিন্তু মিন্টুর ওই এক বুলি এক জিকির ” ব্যবসা টাকা বাড়ি গয়না সব হবে তখনই , যখন গাভীটা বেঁচে থাকবে । ”
এরপর অনেক বোঝানোর পরেও মিন্টু তোতাপাখির মতো বলতে থাকে গাভী মরার কথা ।
পিন্টু আর বোঝাতে পারে না শুধু বলে , ” দেখ মিন্টু , ঐরকম ভাবলে তুই কোনোদিনও কোনো কাজ করতে পারবি না । এই ধরণের ভাবনা ঠিক নয় । কারণ তুই আগে অন্ধকার দিকটাই দেখছিস । ” এইভাবে দুই বন্ধুর তর্কের পর কয়েকদিন গেল । পিন্টু একাই একটা দুগ্ধবতী গাভী কিনে ফেলে । সে এখন আর দিন মজুরের কাজে যায় না । সকাল থেকে সন্ধ্যা গাভীর দেখাশুনা করে , দুধ দোয় । প্রথম কিছুদিন দুধের গ্রাহক খুঁজতে , গাভীর পরিচর্যা করতে কষ্ট হয়েছিল । ধীরে ধীরে পিন্টু এই কাজগুলোতে দক্ষ হয়ে উঠতে লাগলো ।
আর দিনমজুরের কাজের শেষে মিন্টু রোজ তার কাছে আসতো , আর পিন্টুর সংঘর্ষ করার , পরিশ্রমের বিষয়টি দেখতো । আর ভাবতো তাদের দিনমজুরের জীবন কত ভালো ছিল । রোজ সকালে কাজে যেত আর বিকেলে ফিরে এসে সন্ধ্যায় কাজ কর্মহীন আড্ডা দিতে পারত । এখন পিন্টুর জীবনে আড্ডা দেবার অবসর নেই । তার উপর এত ঝুঁকি নিয়ে কেন যে গাভী কিনলো । যদি মরেই যায় । সবই যাবে তার ।
আর ঐ দিকে কালো গাভীর মধ্যেই জীবনের আলো দেখতে পায় পিন্টু । সে দ্বিগুন উৎসাহে কাজ করতে লাগলো । এটা ঠিক যে তার কাছে এখন অবসর নেই । কিন্তু সুন্দর ভবিষ্যতের কল্পনায় সময় নষ্ট করতে সে রাজি নয় ।
এইভাবে দিন যায় । আস্তে আস্তে তার গ্রাহক বাড়তে থাকে । গাভী বাড়তে থাকে । কাজের লোকও বাড়তে থাকে । গাভী ও তার মরে নি ।অন্যদিকে মিন্টু গাভী মরার কথা ভাবে আর একইভাবে দিনমজুরের কাজ করে যায় । এদিকে পিন্টু ধীরে ধীরে ধনী হতে থাকে ক্রমশঃ ।
বন্ধুরা , এই গল্পের ভেতরের বিষয়টিকে যদি আমরা বুঝতে পারি , তাহলে আমাদের জীবনে পদক্ষেপ নেবার শিক্ষাটি অর্জন করতে পারবো ।
এসো খুব কম কথায় দেখে নেই আমরা শিখলামঃ
১. কিন্তু , যদি , তবে ইত্যাদির জালে আটকে পড়তে নেই ।
২. নেতিবাচক ভাবনা কখনোই মাথায় আনতে নেই ।
৩. নো রিস্ক নো গেইন । ঝুঁকি নিতে পারলেই জীবনে সাফল্য আসবে ।