সময়ের মূল্যঃ একটি দারুন অনুপ্রেরণার গল্প।
সময়ের মূল্যঃ সময় নষ্ট করা মানে জীবনের অংশ নষ্ট করা । আপনি সময়কে মূল্য না দিলে সময়ও আপনাকে মূল্য দিবে না। Value of Time
একটি অপরুপ সুন্দর গ্রামে দুই জন বন্ধু ছিল। একজনের নাম রবিন এবং অন্যজনের নাম সিয়াম। দুজনেই ছোট বেলা থেকে খুব ভালো বন্ধু এবং পড়াশোনাতেও খুব ভালো। একজন ক্লাসে প্রথম হলে অন্যজন দ্বিতীয় হতো প্রতি ক্লাসে। গ্রামের সবাই তাদের দুইজনকে অনেক ভালবাসে। দুই বন্ধুরই স্বপ্ন তারা অনেক বড় হবে। দু্ই বন্ধু মিলে ঘুড়ে বেড়াবে সারা বিশ্ব।
স্বপ্নগুলো নিয়ে তার দুইজন প্রায়ই আলোচনা করত। কবে যে তাদের এমন দিন আসবে যবে তারা সারা বিশ্ব ভ্রমণ করবে। এভাবে করে তারা দুই বন্ধু বড় হতে লাগলো।
দেখতে দেখতে এস এস সি পরীক্ষা চলে আসলো। দুইজনই একসাথে খুব ভালভাবে এস এস সি পরীক্ষা দিল। এস এস সি পরীক্ষার পর তারা একসাথে তাবলিগে গেল ৭ দিনের জন্য। এই সাতদিন তার একসাথে সারাক্ষন থাকার সুযোগ পেল। প্রতি রাকাত নামাজ আদায় করে দুইজনই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দোআ করতো।
এক সাথে খুব ভাল সময় কাটলো সাত দিন। তাবলিগে থাকা অবস্থায় তারা সিদ্ধান্ত নিল জেলা শহরের ভাল কলেজটিতে তার দুই জনেই ভর্তি হবে রেজাল্টের পর।
কিছুদিনের মধ্যেই রেজাল্ট বের হলো, দুইজনই স্টার মার্ক সহ স্কুলের সেরা রেজাল্ট করেছে। এলাকায় তাদেরকে নিয়ে সবাই আনন্দিত। তাদের বাবা মাও অনেক খুশি। রেজাল্ট বের হবার পর তার তাদের শিক্ষকদের কাছে গিয়ে দোআ নিয়ে আসলো। দুই জন তাদের পরিবারের সাথেও আলোচনা করল যে তার জেলা শহরের কলেজে ভর্তি হবে। পরিবারও তাদের কথা মত তাদেরকে জেলা শহরের কলেজে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে দিল।
যথারিতি তারা কলেজের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করল এবং থাকার জন্য একটি মেস ভাড়া করল। এখন তারা দুই বন্ধু একসাথেই থাকে সুযোগ পেলেই তারা তাদের স্বপ্নের কথা আলোচনা করে। কবে তারা বিশ্বটাকে দেখবে, কবে আসবে সেই মহেন্দ্র ক্ষন। দুই বন্ধু খুব ভাল ভাবে পড়াশোনা করতে লাগলো। কিছুদিনের মধ্যেই তারা শিক্ষক এবং অন্যন্যদের কাছে খুব প্রিয় হয়ে উঠল। প্রথম বছরের পরীক্ষায় তারা দুইজনেই খুব ভাল রেজাল্ট করলো।
দ্বিতীয় বর্ষে উন্নীত হওয়ার কিছুদিন পর পাশের বাসায় একটি নতুন ভাড়াটিয়া আসলো। একদিন রবিন জানালা খুলতেই দেখলো একটি মিষ্টি মেয়ে তাদের জানালার পাশে বসে বসে বই পড়ছে। সেদিন দুজনে চোখাচোখি হলেও কোন কথা হলো না। রবিনের পড়ার টেবিলের সামনেই জানালা আর ওপাশের জানালাটাও একদম সামনেই। প্রায়ই পাশের বাসার মেয়েটির সাথে তার দেখা হয় কিন্তু কোন কথা হয় না।
একদিন রবিন এবং সিয়াম দুজনই প্রাইভেট পড়তে গিয়েছে। যাওয়ার সময় জানালাটা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে। যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রচন্ড বৃষ্টি । এদিকে জানালা খোলা থাকায় বৃষ্টির পানি এসে রবিনের বইগুলো ভিজে যাচ্ছিল। মেয়েটি দেখতে পেয়ে একটা লাঠি দিয়ে কোনমতে জানালা চাপিয়ে দিয়েছে যাতে বইগুলো না ভিজতে পারে।
দুই বন্ধু যখন বাসায় আসলো দেখলো রবিনের কিছুটা বই ভিজে গেছে কিন্তু জানালা কে চাপিয়ে রেখেছে?
সন্ধার পর পড়তে বসছে রবিন এমন সময় মেয়েটি এসে বলল বৃষ্টি এসে তো আপনার সব বই ভিজে যাচ্ছিল। আমি কোনমতে জানালাটা চাপিয়ে দিয়েছিলাম। অহ্ আচ্ছা, তাহলে আপনি জানালা চাপিয়ে দিয়েছিলেন।
ধন্যবাদ আপনাকে। ধন্যবাদ দিতে হবে না। দেখছিলাম বইগুলো ভিজে যাচ্ছে আর আপনাদের কাউকেই বাসায় দেখছিলাম না তাই একটু চাপিয়ে দিয়েছিলাম।
মেয়েটিঃ কি নাম আপনার?
রবিনঃ আমার নাম রবিন আর আমার বন্ধুর নাম সিয়াম। সে এখন ঘুমাচ্ছে। সারা রাত পড়বে তো তাই। আপনার নাম কি?
মেয়েটিঃ আমার নাম মিতা। আমি ক্লাস দশম শ্রেনীতে পড়ছি। আপনি কিসে পড়ছেন?
রবিনঃ আমরা দুজনই ইন্টার সেকন্ড ইয়ারে পড়ি।
এর মধ্যেই মিতা মায়ের ডাক মিতা… এইদিকে আয় তো মা।
এভাবে কিছুদিন চলার পর তার দুইজন বাহিয়ে দেখা করা শুরু করল। রবিন আস্তে আস্তে ক্লাস ফাঁকি দিয়েও মিতার সাথে ঘুরতে বের হয়। আর মিতা প্রাইভেট পড়ার কথা বলে রবিনের সাথে ঘুরে বেড়ায়। দারুন সময় কাটছে রবিন ও মিতার। সিয়াম টের পেয়ে বন্ধুকে অনেক বার বুঝানোর চেষ্ঠা করল যে এভাবে পড়াশুনা করলো তো তুই ফেইল করবি।
এই শুনে রবিন বললো আরে এটাইতো সময় লাইফ এনজয় করার এখন না করলে কি বুড়া হলে করবো নাকি। উল্টো সিয়ামকে রবিন বুঝায় লাইফটা এনজয় কর। মিতার একটা ফ্রেন্ড আছে তুই ওর সাথে সময় কাটা।
এভাবে রবিন তার বেশির ভাগ সময় মিতার সাথে ঘুরে বেড়ায় আর সিয়াম সারাদিন রাত পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে। দেখতে দেখতে ফাইনাল পরিক্ষা চলে আসলো। এবার রবিন তো কোন কুলকিনার পাচ্ছেনা কি করবে। দুজনেই পরিক্ষা দিল। রেজাল্ট আউট হলো রবিন কোনমতে সেকেন্ড ডিভিশন পেলো। আর সিয়াম আবার কয়েক বিষয়ে লেটার সহ স্টার র্মাক পেল।
র্ভতি পরিক্ষায় রবিন কোন পাবলিক ইউনির্ভাসিটিতে এপ্লাই করার সুযোগই পেল না। আর সিয়াম চান্স পেলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রবিন কি করবে? সে জেলা শহরের সেই কলেজেই ডিগ্রিতে র্ভতি হয়ে গেলো।
কিছুদিন পর রবিন ও মিতা বাড়ীতে না জানিয়ে বিয়েও করে নিল। আর সিয়াম সফলতার সাথে অনার্স শেষ করল। মাস্টার্স পড়া কালিন সময় সে উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করল। কিছুদিন পর কানাডা থেকে অফার আসলো শতভাগ স্কলাশীপ সহ। সিয়াম কানাডা যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল।
আরও পড়ুনঃ জীবনের বাস্তবতা নিয়ে সেরা অনুপ্রেরনা মূলক গল্প
দুই বছর পর…
সিয়াম কানাডায় অনেক বড় একটি মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে চাকরী পেয়ে গেলো এবং কানাডায় স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ পেলো। এখন সিয়াম কানাডিয়ান পাসর্পোট ধারী। বিশ্বের যেকোন দেশে যেতে তার কোন সমস্যা নেই। কিছুদিন পর বিয়েও করলো। মেয়েটিও কানাডায় পড়তে গিয়েছিল।
এখন তারা দুইজন সুযোগ পেলেই ঘুরতে বের হয়ে যায়।
অন্যদিকে রবিন তার পড়াশুনাই শেষ করতে পারলো না। তারপরও এখন ছোটখাটো একটা চাকরী করছে। সিয়ামের লাইফ এখন রবিনের কাছে স্বপ্ন। যদিও তার সুযোগ ছিল সিয়ামের মত লাইফ কাটানোর।
সময়ের ব্যবধানে দুই বন্ধুর জীবনযাপন সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেল। শুধু সময়ের মূল্য না দেয়ার কারনে।
সময়ের সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে তার মূল্য সারা জীবন ভোগ করতে হবে যেমন রবিন এখন করছে।
তাই “সময়ের মূল্য যথাযথ দিতে হবে কারণ সময়কে মূল্য না দিলে সময়ও কিন্তু আপনাকে মূল্য দেবে না”।প্রতিটি মূহুর্তকে সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করূন, সময় চলে গেলে আর সেটাকে আর কখনো ফিরে পাওয়া যায় না।
সময়ের মূল্য একটি মোটিভেশনাল ছোট গল্প যা জীবন পরির্বতন করতে পারে।
বর্তমান বাস্তবাতা নিয়ে একটি দারুন গল্প
এক দিন এক বাড়িতে বড় ধরনের ডাকাত ঢুকে পড়েছে। সেই বাড়ী বাস করা একটি গাধা ও একটি কুকুর পাশাপাশি বসে আছে। গাধাটি মনে মনে ভাবছে কুকুর হয়তো এই ডাকাতের বিরুদ্ধে কিছু একটা ব্যবস্থা নিবে।
কিন্তু, নাহ !
কুকুরটা একদম চুপচাপ ফুরফুরে মেজাজে শুয়ে আছে। কুকুরটির এহেন চুপচাপ থাকতে দেখে গাধার মনে দারুন সন্দেহ তৈরী হলো।
সে তখন কুকুরটির কাছে এসে বললো কুকুর ভাই, এবার তুমি একটা কিছু করো। দেখতে পাচ্ছো না ডাকাতটা কিভাবে বড় গুদাম ঘরের তালাটা ভেঙ্গে ফেলছে।
গাধার কথায় কুকুর কর্ণপাত না করে বসে রইলো। হঠাৎ গাধা চেয়ে দেখলো কুকুরের সামনে হাড্ডি। হাড্ডির সাথে মাংসও আছে। গাধা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
এ কি দেখছে সে ?
বাড়ির একমাত্র বিশ্বস্ত সিকিউরিটি প্রিয় কুকুর ভাই কি শেষ পর্যন্ত ডাকাতের কাছে বিক্রি হয়ে গেলো ?
সেটাও আবার একজন ডাকাতের মত বিশ্বাসঘাতক, বেইমান, স্বার্থপরের কাছ থেকে ? আহ্, ছিঃ! ছিঃ! গাধাটা এখন কি করবে তাহলে ? এদিকে চোরটা আস্তে আস্তে দরজার তালা ভেঙ্গে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে।
সহজ সরল গাধাটির আর সহ্য হচ্ছে না। সে আর চুপ থাকতে পারলো না। গাধাটি তখন গগনবিদারী চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।
তার চিৎকারে বাড়ির মালিকের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
মালিক খুব বিরক্ত হলো। সে ঘর থেকে বের হয়ে দেখলো কুকুর নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে আর গাধা শুধু শুধু চিৎকার চেঁচামেচি করছে আর লাফাচ্ছে। বাড়ীর মালিক এই অবস্থা দেখে ভাবলো হয়তোবা গাধাটি পাগল হয়ে গেছে বা জ্বিনে ধরেছে।
তাই মালিক বিরক্ত এবং রাগান্বিত হয়ে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে গাধার পিঠে বেশ শক্ত করে কয়েকটা আঘাত করল। এতে করে গাধাটি শাররিকভাবে খুবই ব্যথা পেলো। সব থেকে বেশী ব্যথা পেলো মনে।
গাধাটি এখন চিন্তা করছে এই রকম হলো কেন? এখন সে কোথায় যাবে ?
ভালবাসার মালিকের ধন সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে উল্টো নিজেকেই মার খেতে হলো আজ। আর যার চোর ধরা যার দায়ীত্ব ছিলো সে কিছু পয়সা খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে।
সে নিজে দায়িত্ব মাথায় নিয়ে অপরাধী হয়েছে। অগত্যা গাধা মনে মনে ভাবছে- দায়িত্বশীলরা নষ্ট হয়ে গেলে করার কিছুই থাকে না। এ সময় কিছু করতে যাওয়া বোকামী ছাড়া আর কিছু না !!
গল্পটা এখানেই শেষ। কিন্তু আমার ভাবনাটা এখান থেকেই শুরু। আমরা যারা ডাকাতদের বিরুদ্ধে কথা বলছি, তাদের অবস্থাও ঐ গাধাটার মত। কথা বলে শুধু শুধু সবার সামনে অপরাধী হচ্ছি।
আর এই ধরনের কুকুররা তলে তলে টোপ গিলছে এবং কোটি কোটি টাকার বাড়ী গাড়ীর মালিক হয়ে যাচ্ছে। ডাকাত ও কুকুরের গলাগলি যতদিন থাকবে ততদিন আমাদের মত গাধাদের এই শাস্তি সহ্য করে যেতে হবে। এখন আমাদের চোখ বুজে সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই।
তবে একথা সত্য যে, প্রকৃতি ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সুতরাং সাবধান।
গল্পটির সারমর্ম আপনি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী করে নেবেন।