জীবন পরিবর্তনকারী সেরা ৫ টি অনুপ্রেরনা মূলক গল্প । ধৈর্য্য সহকারে প্রতিটি গল্প মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, অবশ্যই আপনি কাজে অনুপ্রেরনা পাবেন ।
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০১
ঝুকি নিতে পারলেই জীবনে সফলতা আসবে
একদিন মন্দিরের মেঝেতে থাকা একটি সাধারন পাথর মূর্তি বানানো এক পাথরকে বলছে ও ভাই দেখেছো, আমরা দুইজনই পাথর অথচ মানুষ তোমাকে কত আদর, ভালবাসা ও সম্মান করে, তোমাকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখে, তোমাকে ভক্তি করে, তোমার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে পার্থনা করে আর আমাকে মানুষ পাড়িয়ে পাড়িয়ে পিষ্ঠ করে ফেলে ।
তখন মূর্তির পাথরটি মেঝেতে থাকা পাথরটিকে উত্তর দিল, আজ হয়ত তুমি আমাকে দেখছো মানুষ আমাকে ফুল দিচ্ছে, পুজো করছে কিন্তু যেদিন আমাকে লোহার যন্ত্র দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে রক্তার্থ করে এই মূর্তিতে পরিনত করেছে সেই কষ্ট বলার মত ভাষা আমার নেই ।
আমি সেদিন সহ্য করে ছিলাম বলেই আজ মানুষ আমাকে ফুল দিচ্ছে, পুজো করছে । আর তুমি সাধারন পাথরের মত দিন কাটাচ্ছ ।
গল্পটি থেকে কি শিখলামঃ
১. কষ্ট হলেও নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে একদিন মানুষ আপনাকে সংর্বদনা দিবে ।
আরও পড়ুনঃ জীবনে বড় হতে চাইলে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০২
লোক দেখানো আবেগ- অনুভূতি দেখে প্রভাবিত হয়ে যেয়ো না ।
একদিন স্বামী আর স্ত্রী বেড়াতে গেল চিড়িয়াখানায়। তারা দেখল একটি বানর তার সঙ্গীনির সাথে খেলছে, খুনসুটি করছে। স্ত্রী দৃশ্যটা দেখে মুগ্ধ হয়ে স্বামীকে বলল: কী চমৎকার ভালোবাসার দৃশ্য তাই না !
এরপর তারা গেল সিংহের খাঁচার কাছে । দেখল: সিংহ খাঁচার একপাশে চুপচাপ বসে আছে। সিংহীটাও অদূরে অন্য দিকে ফিরে বসে আছে। স্ত্রী দেখে বলল: আহরে! ভালোবাসার কী নির্মম পরিণতি !
স্বামী এতক্ষণ চুপচাপ স্ত্রীর পাশে হাঁটছিল। এবার নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন: স্বামী স্ত্রীকে বলল, এই ধরো, এই ছোট পাথরটি সিংহীর দিকে ছুঁড়ে মারো,আর দেখো কী ঘটে! মহিলাটি যখন ছোট পাথরটি সিংহীর দিকে ছুঁড়ে মারল, সিংহটি তখন ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। সঙ্গীনিকে বাঁচানোর জন্য গর্জে উঠলো।
এবার স্বামী স্ত্রীকে বলল, মেয়ে বানরটার দিকে ছুঁড়ে মারো। দেখ কী ঘটে।পুরুষ বানরটার আচরণ লক্ষ্য কর। স্ত্রী ছোট পাথরটি বানরীর দিকে ছুঁড়ে মারল । দেখা গেল ছুঁড়ে মারার আগেই স্ত্রী
বানরটা নিজের আত্মরক্ষার্থে ছুটে পালিয়ে গেল। সঙ্গীনির দিকে একবার ফিরেও তাকাল না।
স্বামী বলল: মানুষ তোমার সামনে যা প্রকাশ করে তা দেখে প্রভাবিত হয়ে যেয়ো না। অনেক মানুষ আছে যারা তাদের বানোয়াট , লোক দেখানো আবেগ- অনুভূতি প্রকাশ করে অন্যকে প্রতারিত করে। আবার অনেক মানুষ আছে যারা তাদের ভেতরে গভীর অনুরাগ-ভালবাসা লুকিয়ে রাখে।
আর বর্তমানে এই সিংহদের চেয়ে বানরদের সংখ্যাই বেশী । আর মানুষ এই বানরদেরকেই পছন্দ করে ।
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০৩
সমস্যাকে ঝেড়ে ফেলে সামনে আগাতে হবে
এক লোকের খুব প্রিয় গাধাটি একদিন একটি গভীর খাড়া পাহাড়ে খাদে পড়ে যায়। লোকটি গাধাটিকে টেনে তোলার আপ্রান চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন গাধাকে জীবন্ত সমাহিত করার।
তিনি গাধার উপর মাটি ঢালতে থাকেন। অপরদিকে ভার কমাতে গাধাটি গায়ে পড়া মাটি ঝেড়ে ফেলে দিতে থাকে। আর তার উপর দাড়াতে থাকে।
আরো মাটি পড়তে থাকে , সে ঝাড়তে থাকে আর উপরে উঠতে থাকে ।
এভাবে লোকটি মাটি ফেলতে থাকে আর গাধাটি মাটি ঝেড়ে ফেলতে ফেলতে উপর উঠতে থাকে । আস্তে আস্তে দুপুর নাগাদ সে অনেকখানি উপরে উঠে আসতে সক্ষম হয় । এক পর্যায়ে গাধাটি উপরে ঊঠে আসে।
সমস্যাকে সঙ্গি নয়, ঝেড়ে ফেলে, তার থেকে শিক্ষা নিয়ে চলতে থাকলে সুদিন আসবেই ।
আরও পড়ুনঃ ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের সাধারন কিছু ভূল
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -০৪
আপনি অন্যজনকে যা দেবেন, ঠিক সেটাই পরবর্তীতে আবার আপনার কাছে ফিরে আসবে তা সেটা সম্মান হোক অথবা ঘৃণা ।
এক গ্রামে একজন সৎ ও দরিদ্র কৃষক ছিলেন.. তিনি দুধ থেকে দই ও মাখন তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন । একদিন কৃষকের স্ত্রী মাখন তৈরি করে কৃষককে দিলেন বিক্রি করতে । কৃষক মাখনগুলো বিক্রি করার জন্য গ্রাম থেকে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন । মাখন গুলো গোল-গোল রোল আকৃতিতে রাখা ছিল । যার প্রত্যেকটির ওজন ছিল ১ কেজি করে । শহরে পৌঁছে কৃষক প্রতিবারের ন্যায় পূর্ব নির্ধারিত দোকানে মাখন গুলো দিয়ে পরিবর্তে লবন, তেল, চিনি, মসলা ও তার সংসারের প্রয়জনীয় সদাই নিয়ে আসতেন ।
একদিন কৃষক দোকান থেকে চলে যাওয়ার পরে দোকানদার মাখনের বানানো রোল গুলো ফ্রিজে রাখার সময় ভাবলেন ওজন ঠিক আছে কিনা? একবার পরীক্ষা করে দেখা যাক, মাখনের রোল গুলো ওজন করতেই উনি দেখলেন মাখনের ওজন আসলে আছে ১০০০ গ্রাম নয়, প্রতিটা আছে ৯০০ গ্রাম করে । পরের সপ্তাহে যখন আবার কৃষক সেই দোকানে মাখন বিক্রি করতে গেলেন.. দোকানের সামনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে দোকানদার কৃষকের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলতে লাগলেন.. ‘বেরিয়ে যাও আমার দোকান থেকে.. এবার থেকে কোন বেঈমান চিটিংবাজের সাথে ব্যাবসা করব না । আমার দোকানে আর কোনদিন পা রাখবে না.. ৯০০ গ্রাম মাখন ১ কেজি বলে বিক্রি করা লোকটার মুখ আমি দেখতে চাইনা ।
কৃষক বিনম্র ভাবে কম্পিত স্বরে দোকানদারকে বললেন- দাদা! দয়া করে রাগ করবেন না.. আসলে আমি একজন খুবই গরিব মানুষ, দাড়িপাল্লা বা বাটখারা কেনার মতো পয়সা আমার নেই । তাই আপনার থেকে প্রতিবার যে এক কেজি করে চিনি নিয়ে যেতাম সেটাই দাড়িপাল্লার একপাশে রেখে অন্য পাশে মাখনের রোল উঠিয়ে মেপে নিয়ে আসতাম।
অনুপ্রেরনা বা মোটিভেশনাল গল্প -৫
একটি নতুন গাড়ী ও একটি ফুটফুটে বালক
সদ্য নতুন কেনা গাড়ীটা যখন বাসার নীচে পার্কিংয়ে যখন পরিষ্কার করছিলাম তখন আমার ছয় বছরের আদরের ছেলেটা লোহার একটা কিছু দিয়ে চকচকে গাড়ীটাতে কিছু লিখছিল । খুব শখের গাড়ী তাই আর রাগ সামলাতে না পেরে ছেলের হাতের উপর হাতে থাকা জিনিসটা দিয়ে আঘাত করলাম । রাগের মাথায় খেয়াল করেনি যা দিয়ে আঘাত করেছি সেটা ছিল লোহার একটা পাইপ ।
আমার ছোট্ট ছেলেটা এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে ঘুমাচ্ছিল আর আমি ওর পাশে বসে কাঁদছি । লোহার আঘাতে ছেলেটার চারটা আঙুল ভেঙে গেছে। আর ঠিক হবে না কখনও । আমার চোখের পানি ওর গালের উপর পড়ায় তার ঘুম ভেঙে যায় । ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে তাকিয়ে আমায় বলে ‘সরি বাবা, আমি আর গাড়ীর উপর কখন্লই লিখব না । আমার আঙুলগুলো কি আবার আগের মত হবে বাবা?
বাসায় ফিরে এসে পুরো গাড়ীটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলি । তারপর ক্লান্ত হয়ে যখন বসে পড়ি তখন আমার চোখ পড়ে গাড়ীর গায়ে ছেলের লিখাটার উপর, তাতে লিখা ছিল ”Love u Dad”
পরদিন সকালে সেই হতভাগ্য বাবা ভীষণ কষ্টে আত্মহত্যা করেন। তার নিথর দেহের পাশে একটা চিরকুট পড়ে ছিল, আর তাতে লেখা ছিল : ‘Anger & love have no limits. The choice is yours!’
রাগ পরিহার করুন। অশান্ত না হয়ে একটু ধৈর্য ধরুন তা না হলে ফলাফল হবে ভয়ংকর ।