মোটিভেশনাল ছোট গল্প যা জীবন পরির্বতন করতে পারে
এখানে একটি মোটিভেশনাল গল্প শেয়ার করা হয়েছে। যে মোটিভেশনাল গল্পটিতে একটি পাখি ও পাখির মাংস বিক্রেতার এক শিক্ষনীয় গল্প উল্লেখ করা হল। পাখিটি থেকে পাওয়া তিনটি মোটিভেশান উক্তির সাহয্যে মাংস বিক্রেতার জীবন বদলানোর কাহিনি ফুটে উঠেছে। এটি একটি বাংলা মোটিভেশান ছোট গল্প। যা আপনার জীবন কে বদলাতে সক্ষম। মনোযোগ দিয়ে এই মোটিভেশান গল্পটি পুরো পড়ুন। অনেক কিছু জানতে পারবেন। আর অনুরোধ রইল এই মোটিভেশান ছোট গল্পটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার। এটি একটি মোটিভেশনাল ছোট গল্প যা জীবন পরির্বতন করতে পারে।
একটি পাখি ও একজন পাখির মাংস বিক্রেতার গল্প
একজন পাখির মাংস বিক্রেতা জঙ্গলে গেলেন পাখি ধরতে। কারন, তার কাজই ছিল পাখি ধরে তার মাংস বিক্রি করা। তিনি জঙ্গলের মধ্যে একটি ছোট্ট গাছের ডালে একটি অসম্ভব সুন্দর পাখিকে বসে থাকতে দেখলেন। তিনি আস্তে আস্তে গিয়ে তার সাথে নিয়ে যাওয়া পাখি ধরার ফাঁদ ব্যবহার করে পাখিটিকে ধরে ফেললেন। ধরে ফেলার পর ফুটফুটে পাখিটিকে খাঁচায় বন্দি করলেন। পাখিটা তখন কিচির মিচির করে তাকে অনুরুধ করে বলল তুমি আমাকে ছেড়ে দাও।
পাখির মাংস বিক্রেতা বলল, আমি তোমাকে ধরেছি কারন, তোমাকে জবাই দিয়ে তোমার মাংস বিক্রি করে টাকা পাব। পাখিটা বলল তুমি যদি আমায় ছেড়ে দেও আমি তোমায় ৩ টি উপদেশ দিব। যা তোমার জীবনকে পুরো পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।
পাখির মাংস বিক্রেতা ভাবল কতোই বা টাকা পাব এই ছোট্ট পাখির মাংস বিক্রি করে। কিন্তু পাখির দেওয়া ৩ টি উপদেশ যদি কাজে লাগে তাহলে জীবনে অনেক কিছু করতে পারব। তাই তিনি রাজি হয়ে গেলেন।
পাখিটি বলল : প্রথম উপদেশটি দিব যখন আমি খাঁচা থেকে মুক্তি পেয়ে উড়তে থাকব। আর দ্বিতীয় উপদেশটি দিব যখন আমি ঔই বড় গাছটির ডালে গিয়ে বসব। তৃতীয় উপদেশটি দিব যখন আমি ওই গাছের ডালটি থেকে অনেক উপরে উঠে যাব। পাখির মাংস বিক্রেতা খাঁচার দরজাটি খুলে দিলেন। পাখিটি খাঁচা থেকে বেরিয়ে উড়তে উড়তে বললঃ
আমার প্রথম উপদেশটা হলঃ
“ বিগত সময়ে নিজের করা ভুল গুলোর জন্য অনেক বেশী অনুশোচনা করে নিজেকে কোন প্রকার যন্ত্রণা, দুঃখ ও কষ্ট দিয়ে ভরিয়ে তুলবে না”
এই বলে পাখিটি ডালে গিয়ে বসল। আর তখন মাংস বিক্রেতা বলল ঠিক আছে আমি অনুশোচনা করব না আমার অতীতের যেকোন ভুলের জন্য।
এখন তোমার দ্বিতীয় উপদেশটি দাও। পাখিটা বলল ঠিক আছে, এবার আমার দ্বিতীয় উপদেশটা হলঃ
“ এমন কোন কিছু বিশ্বাস করো না যেটা তোমার সাধারণ জ্ঞান এর বিরুদ্ধে যাচ্ছে, যদি না তোমার কাছে এর কোন প্রমান থাকে ”
এই বলে পাখিটি সেই ডাল থেকে উড়ে গেল। তারপর পাখিটি হাসতে হাসতে বলল তুমি হচ্ছো একটি বোকা ও মূর্খ লোক। আমার পেটে দুটি বড় বড় হিরার টুকরো আছে। তুমি যদি ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে আমাকে ধরে রাখতা আর আমাকে কেটে ফেলতা তাহলে তুমি ঔই দুটি হিরার মালিক হয়ে যাইতা, এবং তাত্ক্ষণিক অনেক ধনী হয়ে যাইতা।
এটা শুনে পাখির মাংস বিক্রেতা খুব অনুশোচনা করতে লাগল। যন্ত্রণায় ভেঙে পড়ল যে সে কতবড় ভুল করল। আর সে বলতে লাগল আমি জীবনে আমার এই বোকামির কথা কখনোই ভুলতে পারবো না।
কিছুক্ষণ পর তিনি কিছু অনুশোচনা কাটিয়ে পাখিটিকে বলল ঠিক আছে তোমার তৃতীয় উপদেশটা দাও। পাখিটি উড়তে উড়তে বলল আমি শুধু তোমাকে পরিক্ষা করেছি। তুমি কি বুঝতে পারছ না যে তুমি প্রথম দুইটি উপদেশই মানতে পারনি?
আবার, মাংস বিক্রেতা তৃতীয় উপদেশটি জানতে চাইল?? এক নম্বর যে ভুল করে ফেলেছো আমাকে ছেড়ে তার জন্য তুমি অনুশোচনা করে যন্ত্রণা পাচ্ছো। দুই নম্বর আমি একটা ছোট্ট পাখি কিভাবে আমার পেটে দুটি বড় হিরার টুকরো খাকবে? আমার এই কথাটা তুমি অন্ধের মত বিশ্বাস করেছো।
তুমি তোমার কমনসেন্স কে কাজে লাগাওনি। তোমাকে তো যে কেউ পদে পদে বোকা বানিয়ে ফেলবে। তুমি যখন এই দুটি উপদেশই মানতে পারনি তো তৃতীয়টি শুনে কি করবে? তুমি তো তৃতীয়টি ও কাজে লাগাবে না।
পাখির মাংস বিক্রেতা নিজের ভুল বুঝতে পারল এবং সে পাখিটিকে তৃতীয় উপদেশ এর জন্য খুব অনুরোধ করলো।
পাখিটি উড়তে উড়তে বলল ঠিক আছে, আমার তৃতীয় উপদেশটি হলঃ
“ তুমি ইতিমধ্যে যা জানেছো সেগুলো যদি প্রয়োগ না করো তাহলে নতুন কিছু জানার কোন প্রসঙ্গ উঠে না ”
এই বলতে বলতে পাখিটি উড়ে চলে গেল। কিন্তু এই তিনটি মূল্যবান উপদেশ তার জীবনে দারুন পরির্বতন নিয়ে এল।
বন্ধুরা , এই গল্পের বিষয়টিকে যদি আমরা খুব ভালভাবে বুঝতে পারি , তাহলে আমাদের জীবনে চলার পথে শিক্ষাটি কাজে লাগাতে পারবো । যা শিখলাম যদি ছোট করে বলিঃ
- অতীতের কোন বিষয়কে মনের মধ্যে পোষে রেখে কষ্ট পাওয়া যাবে না।
- কেউ কোন কথা বললেই কোন কিচু না ভেবে লাফ দিয়ে সেটা শুরু করা যাবে না
- আমরা যা জানি তা আগে প্রয়োগ করতে হবে তারপর নতুন কিছ শিখার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
- জীবন একটাই কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করে হতাশ হওয়া যাবেনা।
বন্ধুরা কখনোই এই তিনটি জিনিস ভুলে যাবেন না। আমরা সবাই ভুল করি কিন্তু কখনই অতিরিক্ত অনুশোচনা করে যন্ত্রণা বাড়াবেন না। আর কখন অতীতকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। তবে, অতীতের অভিঙ্গতা কাজে লাগিয়ে বর্তমানকে পরির্বতন করা যাবে।
তাই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলুন।স্মার্ট হন কমনসেন্স কে কাজে লাগান। কখনো কারো কথা বা কাউকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করবেন না, এতে আপনাকে বিভিন্ন ভাবে ঠকতে হতে পারে।
সর্বশেষে আপনি যা জানেন তা প্রয়োগ করুন। কারন প্রয়োগ না করলে আপনি আরো বেশি কিছু জানতে তৈরি নন। জীবন আপনাকে তখনি কিছু দিবে যখন আপনি আপনার কাছে থাকা সবকিছু প্রয়োগ করবেন। মানুষ তার অভিঙ্গতাকে কাজে লাগিয়েই সফল হয়। আর অভিঙ্গতা তখনি হবে যখন আপনি প্রয়োগ করবেন তাহলে এই তিনটি উপদেশ প্রয়োগ করে দেখুন জীবনে দারুন পজেটিভ পবির্তন আসতে বাধ্য।
——- আরও পড়ুনঃ জীবনের বাস্তবতা নিয়ে সেরা অনুপ্রেরনা মূলক গল্প
দ্বিতীয় গল্প:
শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কাউকে ভূল বুঝবেন না।
একজন মহিলার একটি পোষা বেঁজি ছিল। বেঁজিটি খুব বিশ্বস্ত ছিলো। একদিন মহিলাটি তার শিশুকে বেঁজিটির তত্বাবধানে রেখে বাইরে গেল। মহিলাটি বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষন পর একটি কিং কোবরা সাপ বাড়িতে ঢুকলো। শিশুটি সাপ দেখে ভয়ে কাঁদতে লাগলো। বেঁজিটি সাপটির উপর ঝাপিয়ে পড়লো। অনেকক্ষন লড়াই করার পর সাপটি মারা গেল। বেঁজিটি রক্তাক্ত মুখ নিয়ে বাড়ির গেটের সামনে মহিলাটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো ।
যখন মহিলাটি বাড়িতে আসে তখন বেঁজিটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেল। মহিলাটি ভাবলো বেঁজিটি হয়তো তার শিশুকে কামড়েছে। তিনি হাতের সামনে একটি জলের পাত্র দিয়ে আঘাত করে বেঁজিটিকে মেরে ফেললেন । কিন্তু তিনি যখন ভিতরে প্রবেশ করলেন তখন দেখতে পেলেন, শিশুটির পাঁশে একটি মৃত কিং কোবরা সাপ পড়ে আছে। তখন তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। কিন্তু ততক্ষনে যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন সেই মৃত বেঁজিটির জন্য শুধু শুধু আফসোস করে চোখের পানি ফেলা ছাড়া তার আর কিছুই করার ছিল না।
এই গল্পটির থেকে কী শিক্ষা পাই:-
১. আমরা অনেক সময় কোন কিছু না ভেবে খুব দ্রূত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি এবং ধারণার উপর কাজ করে ফেলি, এটা করা মোটেও ঠিক নয় ।
২. কোন কিছু চোখে দেখা মাত্রই বা যে কারো মুখ থেকে কোন কিছু শোনা মাত্রই কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয় ।
৩. মনে রাখবেন কাউকে হুট করে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কোনটিই করতে নেই ।
একটি মোটিভেশনাল ছোট গল্প যা জীবন পরির্বতন করতে পারে